আজ রবিবার, ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মায়ের হাতে ভিক্ষার থালা,তাঁর তিন ছেলে পুলিশ

অনলাইন ডেস্কঃ  মৃত আইয়ুব আলী সরদারের সত্তরোর্ধ স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।তার বাড়ী বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামে । তার ছয় সন্তান প্রতিষ্ঠিত এবং ৩ ছেলে আছেন পুলিশ বাহিনীতে। কিন্তু এ বয়সে যার আরাম-আয়েশে দিন কাটানোর কথা সেখানে দু’বেলা খাবার জোটাতে ভিক্ষা করতে হয় তাকে। একদিন ভিক্ষা না করলে খাবার জোটে না তার ভাগ্যে।

৬ সন্তানের জননী মনোয়ারা বেগম। বড় ছেলে ফারুক হোসেন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), মেজ ছেলে মো. জসিম উদ্দিন পুলিশ সদস্য ও ছোট ছেলে নেছার উদ্দিনও পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই)। অন্য দুই ছেলে শাহাবউদ্দিন ব্যবসা এবং গিয়াস উদ্দিন ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। মনোয়ারা বেগমের একমাত্র মেয়ে মরিয়ম সুলতানা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।

স্থানীয়রা জানান, স্বামী বেঁচে থাকা অবস্থায় ৬ সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই দিন কেটেছে আইয়ুব আলী সরদার ও মনোয়ারা দম্পতির। ২০১৪ সালে আইয়ুব আলী সরদার মৃত্যুবরণ করেন। সংসারে টানাটানি থাকলেও ৬ সন্তানকে কমবেশি শিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন। ৩ ছেলে পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করেন।

কিন্তু গর্ভধারিণী মাকে আজ দু’বেলা খাবারের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতে হচ্ছে। বয়সের ভার আর অসুস্থতার কারণে ভিক্ষা করাও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে মনোয়ারা বেগমের জন্য। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভিক্ষা করতে গিয়ে পা ফসকে পড়ে গিয়ে পায়ের হাড় ভেঙে যায় তার। সেই থেকে আজ পর্যন্ত বাবুগঞ্জে স্টিল ব্রিজের পশ্চিম প্রান্তের একটি খুপড়ি ঘরে বিনা চিকিৎসায় অর্ধাহারে বেঁচে আছেন তিনি।

বিষয়টি জানতে পেরে বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের চিকিৎসার উদ্যোগ নিয়েছেন জেলা পরিষদ সদস্য (৭ নম্বর ওয়ার্ড) ফারজানা বিনতে ওহাব।

সোমবার সকালে উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক শিহাব উদ্দিন মনোয়ারা বেগমকে দেখতে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মনোয়ারা বেগমকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন চিকিৎসক শিহাব উদ্দিন।

জেলা পরিষদ সদস্য (৭ নম্বর ওয়ার্ড) ফারজানা বিনতে ওহাব জানান, সন্তানরা এত খারাপ কিভাবে হতে পারে তার জানা ছিল না। বিষয়টি শুনে আজ সকালে মনোয়ারা বেগমের কাছে চিকিৎসক পাঠিয়েছেন। তার (মনোয়ারা বেগম) চিকিৎসার যাবতীয় খরচ বহন করবেন বলেও জানান ফারজানা বিনতে ওহাব।

তবে বড় ছেলে পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ফারুক হোসেন  বলেন, আমার মাকে আমরা অনেক বার চিকিৎসা করিয়েছি। তার কাগজ পত্র আমার কাছে আছে। বর্তমানে মা বেশি অসুস্থ। তাকে উন্নতমানের চিকিৎসা দেওয়া দরকার। কিন্তু আমরা দুই ভাই মিলে মা’কে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনতে চাইলে গিয়াস উদ্দিন বাধা দেয় এবং আমাদের ফিরে আসতে বাধ্য করে।

এদিকে মনোয়ারা বেগমের ছেলে ইজিবাইক চালক গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমি সামান্য আয়ের মানুষ। টাকার অভাবে মা’র ভালো চিকিৎসা করাতে পারিনি। আমার তিন ভাই পুলিশ কর্মকর্তা। তারা তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অন্যত্র থাকেন। তাদের বলেছি মায়ের ভরণপোষণের

জন্য। তবে তারা মায়ের দিকে ফিরেও তাকায়নি। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছিল। তাতেও কোনো কাজ হয়নি।

বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) দিপক কুমার রায় জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। মনোয়ারা বেগমকে দেখতে ক্ষুদ্রকাঠী গ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।